বৃহস্পতিবার, ৫ মে, ২০২২

উপলব্ধি সমগ্র - প্রেমদেবতা

০১

দাদার অনেক কথাই আমি বুঝতাম না। শুধু যে কথা বুঝতাম না, তা নয়। অনেক আচরণও খেয়ালি পনা লাগত। যাইহোক, বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুঝতে পারি কিংবা পারছি। 
একটা আচরণের কথা বলি। দাদা যে সিগারেট টানে তার ফিল্টার সব সময় থুতুমাখা ভিজে থাকে। দাদা কখনোই দাদার সিগারেট চাইলে দিতেন না। সরাসরি ফিরিয়ে দিয়ে বলতেন আরেকটা ধরান। কখনো কখনো মানুষ ভেদে বলতেন, আরেকটা ধরান, লাস্টে দিয়েন থাকলে। 
আমার কাছে বিরক্ত লাগত। কিন্তু মজার বিষয় হল, আমি কি করে জানি। আমি জানি কারণ, আমাকে দিতেন। খুব কমই আমি নিতাম তার অর্ধেক টানা সিগারেট। আর আমায় হয়ত কিছু না ভেবেই দিতেন, হয়তো বা অন্তরংগের কারণেও। সেটা তিনিই ভাল জানেন। 
তবে আজ আমি উপলব্ধি পেলাম এক উপায়ে, আমিও সিগারেট অন্ধকারে আজকাল জ্বালাতে গিয়ে খেয়াল করে জিবের ছোয়ায় দেখে নিই ফিল্টার নাকি তামাক। কারণ প্রায়শই আমি সিগারেট ফিল্টার জ্বালিয়ে ফেলি। তাই বোধ হল, দাদা নিশ্চয়ই এটা টেস্ট করার জন্য ফিল্টার ভিজাতেন,আর তার থুতুর মাত্রা ছিল বেশি। তবুও দাদা, আমি চাইনা আপনার এ অভ্যাস দূর হোক। থুতু খাওয়ার অধিকার সবার হয়না। 


Warning advisory: ""Never believe in my eyes and stay away from my smile...""

বাজার - প্রেমদেবতা

নাম তার শাহজাহান মিয়া। পেশায় ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। বাংলাদেশের প্রায় যায়গায় তিনি ব্যবসা করেছেন। আমি যখন থেকে দেখেছি তখন তার ব্যবসা ছিল জুতার। ঢাকার সিদ্দিক বাজারে।কয়েকবার গিয়েছিলাম। যতবারই গিয়েছি ততবারই আলু বাজারে ডাক্তার দেখিয়ে আসার সময় আব্বুর সাথে দেখতে গিয়েছিলাম। আসার সময় তিনি আমাকে নতুন ডিজাইনের জুতা আর ১০০ টাকা দিতেন। এই ১০০ টাকা মানে ৯৬-৯৭ এ অনেক কিছু।

যাইহোক একবার উনার সাথে আমার বাজারে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। এক রিক্সায় উঠার পর, উনার বসার স্টাইল এর কারণে আমার বসার যায়গাই ছিলনা। কোনমতে দাঁড়িয়ে রিক্সা ধরেছিলাম। তার উপর আবার তিনি বাজার যাওয়া অব্দি কয়েকবার রাস্তার লোকজনদের রিক্সা দাড় করিয়ে গল্প জুড়ে দিলেন। মুখে বলছেন তার তাড়া আছে কিন্তু গল্পের আবহ তা বলেনা।

কয়েকদফা তিনি রাস্তায় সালামের উত্তর দিতে দিতে অবশেষে আমরা বাজারে পৌছালাম। বাজারে পৌছে তো তিনি বাজার কিনে না কিছুই। খালি ঘুরে।

আর কয়েকজন দোকানী ডাকছে, কাকা! আবার কেউ কেউ মিয়া ভাই বলে। শাহজাহান মিয়া ঝাড়ির স্বরে বলে - মানুষ হ। এমনে করলে লোকজন ভাল করবেনা। বাড়িতে আজ ঈদ লাগছে, দাম কমায়ে ফ্রেশ দে কিছু।

দোকানীঃ কি কন কাকা, আপনের কাছে কমায়েই রাখি, যে কম দিয়া ২ নং মাল ধরায়ে দেয় হেইডা তো কাকা বুঝেননা। চেইতেন না, ভালা ডাই দিমু।

“ওই কাকারে সপ্তাহে শুকনা বাজার রেডি কর”

কথা গুলো কিন্তু দাঁড়িয়ে হচ্ছেনা, হাঁটার মধ্যে হচ্ছে। আমি শাহজাহান সাহেবের পিছু পিছু এবার সবজির এরিয়াতে ঢুকলাম। তিনি সবজির দিকে, এক বয়স্ক দোকানীর কাছে গিয়ে বসল। কিন্তু কথা শুরু করল পাশের ব্লকের মাছের দোকানের কোন এক দোকানদারের সাথে। জানতে চাইলেন, বাজারে স্পেশাল কোন মাছ আছে আজ।

দোকানী কারো একজনের নাম বলে, শেষে নিজের দোকানের ফ্রেশ মাছের রিকমেন্ড করল। মিয়া সাহেব মুখ ঘুরিয়ে সবজির বুড়াকে বলল, ঘরের তরকারি কি কি আছে।

বুড়া, মিয়া সাহেবকে বুঝাতে শুরু করল, শিমটা তার ঘরের গাছের।

মিয়া সাহেব ঝাড়ির স্বরে বলল, মইরা যাইবি মিছা কথা ছাড়ছ না কেন।

বুড়াঃ তুমি কি কও, বাড়ির বোগলে জলিলের চিপাটায় হইছে।

বলতে বলতে মাপতে শুরু করল।

মিয়া সাহেবঃ তুই আমারে যায়গা চিনাস। তোর বাড়ি ঘর আছে নি। আলা কিপটামি করিস না চুসির পো। পোলায় কামদাম করে আজকাল?

বুড়াঃ কিয়ের কি।

মিয়া সাহেবঃ এক কাম কর, বিয়া করাই দে। নাইলে অন্য বেডির দিকে চোখ দিব। পরে আরেক জ্বালা। আর তুই মাপতাছোস কে?

বুড়াঃ আরে ফ্রেশ জিনিস। চাচীরে কইয়ো আমি দিছি। খাইয়া আলা দাম মন চাইলে দিও।

মিয়া সাহেবঃ এতো দিতাছোস কে? আমার আইটেম বেশি লাগব। ১০ পদ না হইলে তোর মতন ফকিন্নি লাগে। মেহমান আইছে।

বুড়াঃ আমু নি।

মিয়া সাহেবঃ রাতে আইয়া পরিস। আর মাছের বাজার কেমন?

বুড়াঃ চড়া। মাছ আহেনাই আজ।

মিয়া সাহেব বাজার না নিয়ে উঠে পড়লেন। মাছের ব্লকে ঢুকলেন। আর আমার হাতে খালি চটের ব্যাগ। আমি বিরক্ত হচ্ছি। আসলে সে একই জিনিস কয়েক দোকানে গিয়ে খোজ করছে আর না নিয়ে উঠে আসে। প্রায় সবাই প্যাক করা শুরু করছে। একবার ভাবছি একই জিনিস এতো দোকানে বলে বলে আসার মানে কি? আর সবাইকে কুশলাদি জিগ্যেস করছে আর কাউকে কাউকে গালিগালাজ করছে। অবাক করে দিয়ে কেউ কেউ হেসে উড়ে দিচ্ছে। আর ফোর্স মার্কেটিং করছে। যাইহোক সবার প্রথমে মাছ কেনা হল। সে মাছ কিনতে প্রায় ২০ মিনিট কথোপকথন হল, এর মধ্যে অনেকেই মাছ নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মিয়া সাহেব যেই মাছ নিয়ে দর কষাকষি করছেন এটা কেউ কিনছেনা। যদিও কয়েকজন অপেক্ষা করছে কেনার জন্য। আমি অবাক হয়ে দেখলাম রাজবংশী একটুও বিরক্ত হচ্ছেনা। সর্বোচ্চ কম মূল্যে মাছ কিনে তিনি যখন বড় মাছটি নিয়ে এবার সবজির দিকে ঢুকলেন সবার কাছ থেকেই কমিয়ে কমিয়ে একই জিনিস কম মূল্যে নিলেন। সবাই সবারটা জানে। বিষয়টি যেন ওপেন সিক্রেট যেন। প্যাকেট করা জিনিস আবার কারো কারো থেকে কমাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার মিয়া সাহেবকে বেশি ধরিয়েও দিচ্ছেন। সেটা তিনি মেনেও নিচ্ছেন।

মোড়ে এক রিক্সার দিকে তাকাতেই সে হাত তুলে দিয়ে এগিয়ে এসে বাজার তার রিক্সায় তুলে নিল। আমি চুপচাপ দেখলাম আর মিয়া সাহেব মিঠাইওয়ালার সাথে গালিগালাজ বন্ধুত্বের স্বরে কথা বলতে শুরু করল। বাজার রিক্সায় তুলে রিক্সাওয়ালা দাঁড়িয়ে ছিল।

মিয়া সাহেব ঝাড়ি দিয়ে বলল- চুরি করবি নি?

রিক্সাওয়ালা হেসে লজ্জা পাইল।

মিয়া সাহেবঃ যা বাড়িত দিয়া আয়। মায় বইয়া রইছে। মেহমান আসছে। খাড়ায় রইছস কেন? আমি আইতাছি।

রিক্সা ওয়ালা চলে গেল। আমরা আরেকটা রিক্সা ধরে মিঠাই বিনে টাকায় নিয়ে, রওনা দিলাম। আসার সময়, যাওয়ার পথের এক লোক ফের রিক্সা থামিয়ে বলল- কাকা বাইরের লোক আইয়া যদি গেরামে আইসা অশান্তি করে হেইডা কি সহ্য করা যায়। ভদ্রলোক হইলে এক কথা। এইডাই মূল বিষয়। আপনেরা জানেন কি করবেন অহন।

মিয়া সাহেবঃ বাড়িতে মেহমান আইছে রাইতে আইয়া পরিস।

লোকঃ কাকা আকিজ বিড়ি খান তো, তাইনা।

দাদা এবার রিক্সাওয়ালাকে বলল- যা যা।

এই শাহজাহান মিয়া আমার দাদা হন। আমার বাবার বাবা।

আমি বললাম- দাদা তুমি ঘুষ হিসেবে বিচারের জন্য বিড়ি নিবা?

দাদা পকেট থেকে বিদেশি স্টাইলের লাইটার বের করে সানমুন সিগারেট ধরিয়ে বলল- এই ফকিন্নি আমারে কি খাওয়াইবো। রাতে ভাত খাওয়াইয়া বুঝায়ে দিমু। তার বাপেরেও আইতে কইছি।

আমি জানিনা দাদা বিচারের পরবর্তী গল্প। তবে সেদিনের সব তরকারি গুলো বড়মা মানে দাদার মা অনেক মজা করে তার নাত নাতি, পুতিদেরও খাওয়ালো দুপুরে। আর বড়মা দাদাকে বলতেছিল, ব্যাটারা তোরে ভালা মন্দ মিশায়ে দিছে। দেখে আনবিনা। কতগুলা সবজি সাইদের মারে দিয়া দিছি। বউ পোলাদের এটি খাওয়ানের জন্য বাইত আনছোস।

দাদা বলতেছে বড়মাকে- বাজারে বারো কিছিমের মানুষ। দু’একটা চিটারি করেই খায়। আরেকদিন বুইজা আনুম নি।

#সৃষ্টি

#premdevota #perspective

Warning advisory: ""Never believe in my eyes and stay away from my smile...""

অসহায়ত্ব

চেয়ে দেখা ছাড়া আমার কিচ্ছু করার নেই। টেনে আঁকড়ে রাখার ক্ষমতা নেই আমার। আমি অযত্নে গড়া মাতাল খারাপ ছেলেটা। আমি মিষ্টি মেয়ের রেখে যাওয়া সঠিক স...